বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন
ডেস্ক নিউজঃ ঊনসত্তরের মহান গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২০ জানুয়ারি। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে আসাদ শহীদ হন। তার স্মরণে দিনটি শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। শহীদ আসাদ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন।
১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালি ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দেন ছাত্রনেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আসাদুজ্জামান। আসাদ শহীদ হওয়ার পর ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে সর্বস্তরের মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার নামে ঢাকাসহ সারা বাংলার রাজপথে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আইয়ুব খানের। এরপরই স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আসাদের আত্মত্যাগ দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে মাইলফলক: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৯ জানুয়ারি) এক বাণীতে তিনি বলেন, আসাদের অসামান্য অবদান দেশের তরুণ প্রজন্মকে সবসময় গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজের ১১-দফা দাবির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ। তিনি শহীদ আসাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং শহীদ আসাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ আসাদের নাম অমর হয়ে আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খায় নতুন মাত্রা যোগ করে। স্বাধিকারের দাবিতে সোচ্চার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ জেল-জুলুম উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসেন। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। পরবর্তীতে সে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।ছয়-দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বৈমষ্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয়-দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। আগামীকাল রবিবার (২০ জানুয়ারি) শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে শনিবার দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছয়-দফার স্বপক্ষে প্রবল জনমতের জোয়ার দেখে আতঙ্কিত সামরিক জান্তা আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে, যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। বৈমষ্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ছয়-দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেন বাঙালির মুক্তির মহান নেতা।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং দমন-পীড়নে বাংলার মানুষ যখন দিশেহারা, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ছয়-দফা তখন বাঙালির মুক্তির দিশারী হিসেবে আবির্ভূত হয়। ছয়-দফা হয়ে উঠে বাঙালির প্রাণের দাবি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শহীদ আসাদের এই আত্মত্যাগ চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করে যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের।’শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ২০ জানুয়ারি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৬৯ সালের এ দিনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শহীদ হন।’ তিনি বলেন, ‘কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে গর্জে উঠে সারা বাংলার মানুষ। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ছাত্র-জনতার এক সমাবেশে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র আসাদুজ্জামান।’ বাণীতে তিনি শহীদ আসাদসহ বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।এদিকে শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে রবিবার বেলা ১১ টায় নয়াপল্টনে যাদু মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি -বাংলাদেশ ন্যাপ ঢাকা মহানগর আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। শনিবার এক বিবৃতিতে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং শহীদ আসাদের আত্মদানকে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের সিঁড়ি’ হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা বিবৃতিতে বলেন, শহীদ আসাদের রক্তদানই আইয়ুব খানের পতনের পথ তৈরি করে। এই গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই স্বাধীনতা সংগ্রাম ত্বরান্বিত হয়। শহীদ আসাদ দিবসে সকাল ৮টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে শহীদ আসাদ স্মৃতিস্তম্ভে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু করে।এছাড়া দিনটি উপলক্ষে আসাদের নিজ গ্রাম নরসিংদীর শিবপুরে রবিবার তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।
-বাসস